বিচিত্র অভিজ্ঞতার রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের ভোট

বিচিত্র অভিজ্ঞতার রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের ভোট

বিচিত্র অভিজ্ঞতার রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের ভোট
পুলিং এজেন্ট

মতামত: কথায় আছে, ভোট বা রাজনীতির ক্ষেত্রে সবই জায়েজ। বৈধ। প্রতিটি নির্বাচনের একটা নিয়ম থাকে। তারপরও দেখা যায় বাড়াবাড়ির খবর। শোনা যায় অনিয়মের কথা। কতকিছু উল্টো কথা শোনা যায়।

কখনো দেখা যায়, শিশুদের দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে। যদিও সেটা সবসময়ই অবৈধ। এ কারণে বলির পাঠা হতে দেখা গেছে শিশুদের। সমর্থক মিছিল নিয়ে নির্বাচন অফিসে না আসতে নিয়ম থাকে।

তারপরও এ কাজটিই করা হয় বহু আনন্দের সাথে। নির্বাচনে ভোট কেনা নিষেধ। কিন্তু এ কাজটির কথাও শোনা যায় প্রায়ই। সবমিলিয়ে এগুলো ‘ভোট বা রাজনীতির ক্ষেত্রে সবই জায়েজ’- এ কথারই প্রমাণ।

এটা বাংলাদেশের সংসদ থেকে শুরু করে সব নির্বাচনের চিত্র। এমন চিত্র শুধু দেশেরই নয়, এটা সভ্য আমেরিকাতেও আছে। তবে প্রচ্ছন্নভাবে। একটু ‘সভ্যভাবে’। এ ধরণের অনিয়মের কারণে খোদ দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনকে পদত্যাগ করতে হয়। যেটা হলমার্ক কেলেঙ্কারি হিসেবে ইতিহাসে কালো হয়ে রয়েছে। বিরোধী দলের কার্যক্রমে আঁড়িপাতার কারণে নিক্সন পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

এবার আসি রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনে। শুক্রবার সকালে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ঢাক-ঢোল বাজনা শুরু তখন থেকেই। বিচিত্র সব নাচের দেখা মেলে কেন্দ্রের আশেপাশে। মুরগি, আপেল রেডি আপ্যায়নের জন্য। ফুটবল, ঘুড়ি রেডি খেলার জন্য। টুপিও রেডি নামাজ পড়ার জন্য। এগুলো সবই ভোটকেন্দ্রের সামনে। পাশে। এইযে টুপি, ঘুড়ি বা ফুটবলের কথা বললাম, এগুলো বিভিন্ন প্রার্থীর প্রতীক। ভাববেন না তাদের প্রতি আমার কোনো ধরণের ক্ষোভ আছে।

আবার অন্যরা হাঁস-মুরগি নিয়ে নাচানাচি করছিল। বরের পাগড়ি মাথায় দিয়ে ঘুরতে দেখা গেয়ে কয়েকজনকে। এগুলোও বিভিন্ন প্রার্থীর প্রতীক। বিচিত্র সব কারবার। যেভাবে হাঁস-মুরগি নিয়ে নাচানাচি হচ্ছিল, এ অবস্থায় যদি তারা মলত্যাগ করতো তবে কী হতো? হতে পারতো অনেক কিছুই। কারো গায়ে সে মল পড়ার কারণে হয়তো গণ্ডগোলের সৃষ্টি হতে পারতো।

যদিও তা হয়নি। তবে সম্ভাবনা খুব ভালো ছিল। কারণ নির্বাচন বা ভোট খুব স্পর্শকাতর। একটুতেই শুরু হয় দ্বন্দ্ব। এছিল সকাল থেকে দুপুরের চিত্র। বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হয়। কিন্তু তার আগেই বিকাল পৌনে চারটায় শুরু দুই সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ। তাও আবার ভোটকেন্দ্রের সামনে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে। এতে দুইজন গুরুতর আহত। এছাড়া ৭-১০ জন বিভিন্নভাবে আহত হয়। সংঘর্ষের পর পদদলিত হয়ে গুড়ো হওয়া বিভিন্ন প্রার্থীদের পোস্টার।
সকালের আশংকাটা বিকাল গড়াতেই সংঘর্ষে রুপ নেয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে কি নির্বাচন কিংবা ভোট চলতে পারে?

এর আগে ২০১৭ সালের মাঝামাঝিতে এই নির্বাচনেই গুলি ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। এমনকি নির্বাচন কমিশনারদেরও আহত করা হয়। নির্বাচন স্থগিত করা হয়। যেখানে সাধারণ নির্বাচনে সিরিয়াস থাকে লোকজন, সেখানে শ্রমিকদের নির্বাচনে এটা চলতে পারে কিভাবে। এ নির্বাচনের কি কোনো নিয়ম-নীতি নেই। নাকি, থাকলেও এভাবে চলে। চলতে দিচ্ছে প্রশাসন।

এবিষয়ে কয়েকজন শ্রমিক নেতা এবং দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে কথা বলা হয়। তারাও একই কথা বলেছেন। তারা বলেন, শ্রমিকদের নির্বাচনতো এমন হবেই। তাহলে এভাবে আর কত দিন। এক নির্বাচন নিয়ে কতবার মারামারি সংঘর্ষ জিইয়ে রাখবে সংশ্লিষ্ঠরা।

উপরের ছাড়াও বিভিন্ন কারণে বহুদিন নির্বাচন হচ্ছিল না। অবশেষে চলতি বছরের ২২ জুন এমপি শাহজাহান খান পুরনো কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। তারপর এ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছিল। এটাতেও একই দশা। যদিও শেষ পর্যন্ত ভোটগ্রহণ শেষ করা হয়। ভোট গণনা চলছিল। এবার দেখার পালা কারা আসছে এ কমিটিতে। আর কী বা হবে ভবিষ্যত? সুত্র: সিল্ক সিটি

মতিহার বার্তা ডট কম  ০৮ অক্টোবর  ২০১৯

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply